Total Pageviews

Wednesday, 9 May 2018

রবি ঠাকুরের আমি-তুমি: সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবনিকেশ





১.

অর্থনীতিবিদ অশোক মিত্তির মশাই একবার প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশকে জানালেন যে কোনো এক কবি 'মহলানবিশ'-এর সঙ্গে 'হদিশ'-এর মিল দিয়ে কবিতা লিখেছেন। মোদ্দা বক্তব্য হলো রবি ঠাকুর তাঁর কাব্যে কতবার 'আমি-তুমি' শব্দের ব্যবহার করেছেন তার হদিশ দিতে পারবেন না মহলানবিশ। দু-এক দিন অপেক্ষা করবার পর রবীন্দ্রকাব্যে 'আমি-তুমি'র পরিসংখ্যান মিত্তির মশাইয়ের হাতে তুলে দিলেন স্বয়ং মহলানবিশ!এ ঘটনার এক চমৎকার বিবরণ রয়েছে রাধারানী দেবীর একটি লেখায় 

আদতে জীবন্ময় রায়ের তত্ত্বাবধানে বঙ্কিম ও রবীন্দ্রনাথের বয়ানে শব্দ-পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ চলছিল। Indian Statistical Institute-এর  Appraisal unit-এ (এখনকার Linguistic Research Unit) এই কাজের সময় মাঝেসাজেই উপস্থিত হতেন জীবন্ময় রায়ের বন্ধু বিষ্ণু দে। পরে এই বিষয়ে একটি আস্ত গবেষণা করে Ph.d পান অধ্যাপক নিখিলেশ ভট্টাচার্য। মহলানবীশ এই ধরণের কাজ কেন করেছিলেন তা আমি বলবার চেষ্টা করেছি ইংরিজি ও বাংলাতে লেখা দুটি  প্রবন্ধে। 
২.

যখন, ১৯৮৬-৮৭ নাগাদ, রবীন্দ্রনাথের লেখায় শব্দ-গোনার একটি জাপানি গণকযন্ত্র-নির্ভর প্রকল্পের কাজে আই.এস. আই.-এর ইকনমিক রিসার্চ ইউনিট-এ  গতায়াত শুরু করি, তখন জানতুম না যে এমন কাজ প্রশান্তচন্দ্র শুরু করেছিলেন বহুকাল আগে, গত শতাব্দীর চারের দশকে। ১৯৯০-তে আই.এস. আই.-এ আপিসী -যোগদানের পর জানলুম সে কথা। জানালেন বর্ষীয়ান সহকর্মী সুকেশ দেবনাথ ও অবসরপ্রাপ্ত অরুনেন্দ্রনাথ রায়। এঁদের পদমর্যাদা একসময় ছিল "কম্প্যুটার"! কি অসীম ধৈর্য নিয়ে তাঁরা বঙ্কিম-রবি-শরতের বয়ান থেকে শব্দ -তালিকা বানিয়েছিলেন জীবনময় রায়ের তত্ত্বাবধানে , তার নমুনা তথা দস্তাবেজ লিগুইস্টিক রিসার্চ ইউনিট-এ ধুলোর মধ্যে ছিল পড়ে। শ্রীদেবনাথের ও শ্রী গোপাল দাসের সহযোগিতায় সেই ধুলো-ভরা দস্তাবেজ সংরক্ষণ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি। কিন্তু এহো বাহ্য, কেননা শ্রী অরুনেন্দ্রনাথ রায়-এর ডায়রি পড়ে আমার চক্ষু চড়কগাছ ! প্রতিদিনের কাজ-করার হিসেবের খুঁটিনাটি ( যেমন, প্রাকৃতিক কম্মের সময়ও তিনি ডায়রিতে লিখে রেখেছেন।) আমার আলস্যকে লজ্জা দেয়।তা আর কি করি, তখন আমি এই খবরটুকুই খালি জানাতে চাইলুম । অধ্যাপক নির্মল দাশ রবীন্দ্রভারতীর বাংলা বিভাগীয় পত্রিকায় এমন দারুন খবর তৎক্ষণাৎ  ছাপতে রাজি! কিন্তু, বাদ সাধলেন জাপানের সঙ্গে কাজ করছেন যে দুই বাঙালি অধ্যাপক, তাঁরা! এতে নাকি তাঁদের কাজের "মৌলিকত্ব" নষ্ট হবে। তখন সহকর্মী শ্রীমতি মাধবী ইন্দুর উদ্যোগে বেরোয় সমতট পত্রিকায়।   

ব্যাস, খেপে গেলেন ওই দুই অধ্যাপক, যাঁর মধ্যে একজন আবার এ বিষয়ে প্রশান্তচন্দ্রের কাছে Ph.d. করেছেন এই বিষয়েই! ধমক শুধু খেলুম না, আমার বিরুদ্ধে জাপানি টাকা-চুরির অভিযোগও এলো, যা আমার  সার্ভিস বুকে এখনো আছে!

এইসব দস্তাবেজ যেন আমাদের দস্তাবেজখানায় ঠাঁই পায়--বড্ড অবহেলায় আছে ওগুলো...

সূত্রনির্দেশ:
১. 1974. Radharani Debi. "পরিপূর্ণতার সুধা নানা স্বাদে" Sambadadhvam. P.C. Mahalanabis Memorial Volume. House Journal Of The Indian Statistical Institute. X:1-4. Dec’1974. (pp.155-160) এখানে পড়ুন: https://goo.gl/LQauk2
যে কবির কথা কয়েছেন রাধারানী দেবী, তিনি আমার বয়স্ক প্রয়াত বন্ধু  কবি শিবশম্ভু পাল! 


২. 1992-93. (with Debnath,S.) ““ভাষা-পরিকল্পনাকার প্রশান্তচন্দ্র””. [Language-planner Prasantacandra’] . লেখন। (pp.102-6). এখানে পড়ুন:https://t.co/1phAY9mCOW

1996. (With Debnath, S.)”Mahalanabis as a Language-planner” Indian Journal of Applied Linguistics. Vol. XXII, No.1 (pp.49-57). Delhi. ISSN  0379-0037 http://linguistlist.org/pubs/papers/browse-papers-action.cfm?PaperID=8082  & ফরাসি ভাষায় তর্জমা http://cat.inist.fr/?aModele=afficheN&cpsidt=2875917  এখানে পড়ুন:   https://t.co/Msd6Q0rGc9

৩. 1992. (with S. Debnath).”সংখ্যাতাত্ত্বিকের সাহিত্য  বিচার” : গল্পগুচ্ছ  [Stylstic Interpretation by  Statisticians: Tagore’s Short Stories.]Samatat:93. Kolkata. (pp.515- 520). R.N. 18270/69, ISSN0036-374X এখানে পড়ুন: https://t.co/qvPTyfrdBI