মূল, মৌল, মৌলিক আর মৌলবাদ নিয়ে কিছু ফান্ডা
আমি নানান সময়ে বলে ফেলি যে নাকি আমার নানান
বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান আছে,
আমার অমুক বিষয়ে ফান্ডামেন্টাল নলেজ আছে,
ওনার ফান্ডা এ ব্যাপারে দুর্ধর্ষ,
অথবা, শুনি উনি নাকি অমুক বিষয়ের মূল ধরে
নাড়া দিয়েছেন,
মনে করি আমার ঘড়িটাই একমাত্র ঠিকঠাক চলছে,
অন্যের ঘড়ি ভুলভাল।
অথচ আমি নাকি মৌলবাদী নই.
ফান্ডা থাকলেও ফান্ডামেন্টালিস্ট নই,
কেননা আমি তো জ্ঞানের ফাউন্ডেশন ধরে ফেলেছি!
আমাদের এই নিজস্ব মৌলবাদ নিয়েই অন্যদের বলি
মৌলবাদী।
আমাদের এইসব না-খেয়াল-করা মৌলবাদের বিপ্রতীপে
পাড়া যায় নাকি কোনো সহিষ্ণুতার রাজনীতির
কথা?
নিরীশ্বর অনেকান্তাবাদের অনুষঙ্গে কয়েকটা
অনেকান্ত (ন+এক+অন্ত) লীলেখেলার প্রস্তাব রাখছি ইয়ে যাকে বলে রুলস অফ দি গেম(স):
১. মনোভঙ্গিমা/মনোপ্রতিন্যাসগত লীলেখেলা: আপনার
মতামত আমার পছন্দ নয়, কিন্তু তা বলে আপনাকে "বর্জন" নয়,
আপনাকে "ত্যাগ" দেওয়া নয়, আপনার মতামতকে
একটি বৈধ "সম্ভাবনা" ধরে নিয়ে "স্বীকৃতি" (=লেজিটিমেট
পসিবিলিটি) দিয়ে শুধু বলবো, "আমি আপনাকে অস্বীকৃতিগ্রহণ
(ন+স্বীকৃতি+গ্রহণ) করলাম।" আর যদি মতে মেলে তাহলে অবশ্যই স্বীকৃতিগ্রহণ করবো
আর সেটাই কমিটমেন্ট! এটা সহিষ্ণুতার রাজনীতির প্রথম পাঠ ।
২. পদ্ধতিগত লীলেখেলা বা তক্কো করার তরিকা :
(ক) অন্যের মতামত, যাকে বলবো
"পূর্বপক্ষ", খন্ডন না করে কেউ স্বপক্ষ বা
"উত্তরপক্ষ" বা নিজ-মতামত ব্যক্ত করতে পারবেন না।
(খ) নানান বিষয়ে নানানভাবে ঝগড়া হতেই পারে,
তবে শ্রেষ্ঠ ঝগড়া হলো গিয়ে "বাদ": শুধুমাত্র
তত্ত্বজিজ্ঞাসার জন্য হারাজেতাহীন সংলাপ; মাঝারিমাপের ঝগড়ায় হারাজেতার ব্যাপার
থাকে--সে ঝগড়ার নাম "জল্প"; আর ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে, খিস্তিখেউড়
করে, পরস্পর মাথাফাটি করে ঝগড়ার নাম "বিতন্ডা"।
"জল্প" আর "বিতন্ডা"-কে অস্বীকৃতিগ্রহণ (ন+স্বীকৃতি+গ্রহণ)
করলাম।
এমন প্রতর্কনির্ভর সংলাপী সমাজ বানাতে আমরা
রাজি আছি কি?
অর্থাৎ ডায়ালগের বদলে অনেকান্ত পলিলগ?
৩. ধরা যাক ক, খ, গ--এই
তিনটে প্রতিযোগী বা পরস্পরবিরোধী তত্ত্ব অথবা উপকল্প (হাইপোথেসেস) আছে কোনো এক
বিষয়ে। চেষ্টা করবো এইসব প্রতিযোগী বা বিরোধী তত্ত্বের মার্জিনস অফ এররস বের করে ক
দিয়ে খ-এর পুনরবলোকন, গ দিয়ে খ-এর ইত্যাদি। বাতিল করবো না কাউকে
ফালতু বলে, কিন্তু পূর্ণ সত্যের বা মিথ্যের দাবি উঠলেই
তাকে এড়িয়ে যাবো, কেননা আমি তো
একটাই পূর্ণ সত্য জানি যে পূর্ণ সত্য বলে
কিস্সু নেই!
[ কমুনিসরা আলিপুর জেলে বন্দি। হঠাৎ ভূমিকম্পে
কারাগারের প্রাচীর গেলো ভেঙে। কমুনিসরা মিটিং-এ বসলেন। প্রশ্ন: "এ সময় জেল
ছেড়ে পালানো প্রতিবিপ্লবী প্রতিক্রিয়াশীল কাজ হবে নাকি তা বিপ্লবে ইন্ধন দেবে ?"
তক্কো শেষ হবার অনেক আগেই 'কল্যাণকামী' রাষ্ট্র পাঁচিল
বানিয়ে ফেললো!]
#
এইরকম কিছু লেখাপত্তর, আমার ভাবনা,
এখানে সাজিয়ে দিলুম।
(সবকটা নীলরাঙা শিরোনাম
হাইপারলিঙ্কড--ছুঁলেই খুলে যাবে!)