সামান্য কিছু ফুটনোটঃ ১। আমেরিকায় এখনো বেশীর ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে এম.এ ডিগ্রী দেওয়া হয়। ২। অর্থনীতির বিজ্ঞান হয়ে ওঠার প্রবল আকাঙ্খার সাথে নয়া-ধ্রুপদী অর্থনীতির র্যাাশনালিটি-র (মানুষের চরিত্র বা প্রত্যাশা) রমরমার মোক্ষম যোগ রয়েছে। আপনার লেখার সূত্র ধরেই বলি, মোটামুটি যে সময় থেকে অর্থনীতি হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিক বিজ্ঞান, সেই সময় থেকেই কোনো অর্থনীতিবিদকে আর রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ বলা হয় না। তার আগে, স্মিথ, মার্ক্স, রিকার্ডো, ভেবলেন, এঁরা সকলেই ছিলেন রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ (political economist)। ১৯৪৮ সালে পল স্যামুয়েলসন লেখেন এক বই, যা নয়া-ধ্রুপদী অর্থনীতিকে প্রথম বিজ্ঞান হিসেবে পরিচয় দেয়। সে বইয়ের নাম কালক্রমে হয়েছে principles of economics, যাতে প্রথম বিজ্ঞানের মত law বা সূত্র আকারে economic man (homo oeconomicus)-এর ব্যবহারবিধি নথিবদ্ধ করা হয়। তার পরে কয়েক হাজার principles of economics এর বই লেখা হয়েছে, যেটা আমেরিকায় (এখন আমাদের দেশেও) কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে সবার আগে পড়ানো হয়। পল স্যামুয়েলসনের এই বইয়ের প্রকাশের সময় থেকেই অর্থনীতি অন্যান্য সমাজবিদ্যার ধারাগুলির থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিতে শুরু করে, আর একইসাথে বিজ্ঞান হয়ে ওঠার দাবী থাকে। স্যামুয়েলসন এম আই টি-তে শিক্ষকতা করেছেন আজীবন। আর শিকাগো-র মানিটারিস্ট মিল্টন ফ্রিডম্যান-এর সাথে বেশ বিরোধিতাও ছিল, কারণ স্যামুয়েলসন ছিলেন কেইন্সিয়ান (তাঁকে নিও-কেইন্সিয়ানিস্ম্-এর জনক বলা হয়)।
৩। এই প্রসঙ্গে স্যামুয়েলসন-এর বংশলতিকা বেশ মজাদার হবে। স্যামুয়েলসন-এর ভাই পেন্সিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েরর এমেরিটাস অধ্যাপক, তার নাম রবার্ট সামার্স (স্যামুয়েলসনকে নিজেই বদলে সামার্স করে নিয়েছিলেন)। তাঁর স্ত্রী অনিতা সামার্স, তিনিও ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক। তাঁদের পুত্র ল্যারি সামার্স, যিনি এক চমৎকার কীর্তিবান অর্থনীতিবিদ। তিনি ক্লিন্টনের জমানায় financial sector এর বেসরকারিকরণ করেছিলেন, ওবামা-র মন্ত্রীসভায় উপদেষ্টা ছিলেন, এক কনফারেন্সে, “মেয়েদের সংখ্যা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে কম থেকে প্রমাণ হয় মেয়েদের বিজ্ঞান করার বুদ্ধি নেই” বলে মহা বিপাকে পড়েছিলেন, আবার যখন ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা ছিলেন তখন এক গোপন নথিতে সহকর্মীকে লিখেছিলেন, “Just between you and me, shouldn't the World Bank be encouraging more migration of the dirty industries to the LDCs (Less Developed Countries)? I can think of three reasons: (1) The measurement of the costs of health-impairing pollution depends on the foregone earnings from increased morbidity and mortality. From this point of view a given amount of health-impairing pollution should be done in the country with the lowest wages. I think the economic logic behind dumping a load of toxic waste in the lowest-wage country is impeccable and we should face up to that. (2) The costs of pollution are likely to be non-linear as the initial increments of pollution probably have very low cost. I've always thought that under-populated countries in Africa are vastly under-polluted; their air quality is probably vastly inefficiently low [sic] compared to Los Angeles or Mexico City. Only the lamentable facts that so much pollution is generated by non-tradable industries (transport, electrical generation) and that the unit transport costs of solid waste are so high prevent world-welfare-enhancing trade in air pollution and waste. (3) The demand for a clean environment for aesthetic and health reasons is likely to have very high income-elasticity. The concern over an agent that causes a one-in-a-million change in the odds of prostate cancer is obviously going to be much higher in a country where people survive to get prostate cancer than in a country where under-5 mortality is 200 per thousand. Also, much of the concern over industrial atmospheric discharge is about visibility-impairing particulates. These discharges may have very little direct health impact. Clearly trade in goods that embody aesthetic pollution concerns could be welfare-enhancing. While production is mobile the consumption of pretty air is a non-tradable. The problem with the arguments against all of these proposals for more pollution in LDCs (intrinsic rights to certain goods, moral reasons, social concerns, lack of adequate markets, etc) could be turned around and used more or less effectively against every Bank proposal for liberalisation.” এটা সামার্সের “let them eat pollution” memo বলে বেশ কুখ্যাতি পেয়েছিল (এসব বেশ সহজেই ভূতকাল হয়ে যায়)। আর অনিতা সামার্স-এর ভাই হলেন কেনেথ অ্যারো, যিনি আরেক খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক। ইনি কল্যাণ অর্থনীতি আর নয়া-ধ্রুপদী অর্থনীতির অন্যান্য ধারায় বেশ প্রভাবশালী। স্যামুয়েলসন আর অ্যারো দুজনেই নোবেল পেয়েছেন। আমার মত, এঁরা দুজনেই অর্থনীতির আজকের চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন।
সামান্য কিছু ফুটনোটঃ
ReplyDelete১। আমেরিকায় এখনো বেশীর ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে এম.এ ডিগ্রী দেওয়া হয়।
২। অর্থনীতির বিজ্ঞান হয়ে ওঠার প্রবল আকাঙ্খার সাথে নয়া-ধ্রুপদী অর্থনীতির র্যাাশনালিটি-র (মানুষের চরিত্র বা প্রত্যাশা) রমরমার মোক্ষম যোগ রয়েছে। আপনার লেখার সূত্র ধরেই বলি, মোটামুটি যে সময় থেকে অর্থনীতি হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিক বিজ্ঞান, সেই সময় থেকেই কোনো অর্থনীতিবিদকে আর রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ বলা হয় না। তার আগে, স্মিথ, মার্ক্স, রিকার্ডো, ভেবলেন, এঁরা সকলেই ছিলেন রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ (political economist)। ১৯৪৮ সালে পল স্যামুয়েলসন লেখেন এক বই, যা নয়া-ধ্রুপদী অর্থনীতিকে প্রথম বিজ্ঞান হিসেবে পরিচয় দেয়। সে বইয়ের নাম কালক্রমে হয়েছে principles of economics, যাতে প্রথম বিজ্ঞানের মত law বা সূত্র আকারে economic man (homo oeconomicus)-এর ব্যবহারবিধি নথিবদ্ধ করা হয়। তার পরে কয়েক হাজার principles of economics এর বই লেখা হয়েছে, যেটা আমেরিকায় (এখন আমাদের দেশেও) কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে সবার আগে পড়ানো হয়। পল স্যামুয়েলসনের এই বইয়ের প্রকাশের সময় থেকেই অর্থনীতি অন্যান্য সমাজবিদ্যার ধারাগুলির থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিতে শুরু করে, আর একইসাথে বিজ্ঞান হয়ে ওঠার দাবী থাকে। স্যামুয়েলসন এম আই টি-তে শিক্ষকতা করেছেন আজীবন। আর শিকাগো-র মানিটারিস্ট মিল্টন ফ্রিডম্যান-এর সাথে বেশ বিরোধিতাও ছিল, কারণ স্যামুয়েলসন ছিলেন কেইন্সিয়ান (তাঁকে নিও-কেইন্সিয়ানিস্ম্-এর জনক বলা হয়)।
৩। এই প্রসঙ্গে স্যামুয়েলসন-এর বংশলতিকা বেশ মজাদার হবে। স্যামুয়েলসন-এর ভাই পেন্সিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েরর এমেরিটাস অধ্যাপক, তার নাম রবার্ট সামার্স (স্যামুয়েলসনকে নিজেই বদলে সামার্স করে নিয়েছিলেন)। তাঁর স্ত্রী অনিতা সামার্স, তিনিও ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক। তাঁদের পুত্র ল্যারি সামার্স, যিনি এক চমৎকার কীর্তিবান অর্থনীতিবিদ। তিনি ক্লিন্টনের জমানায় financial sector এর বেসরকারিকরণ করেছিলেন, ওবামা-র মন্ত্রীসভায় উপদেষ্টা ছিলেন, এক কনফারেন্সে, “মেয়েদের সংখ্যা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে কম থেকে প্রমাণ হয় মেয়েদের বিজ্ঞান করার বুদ্ধি নেই” বলে মহা বিপাকে পড়েছিলেন, আবার যখন ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা ছিলেন তখন এক গোপন নথিতে সহকর্মীকে লিখেছিলেন, “Just between you and me, shouldn't the World Bank be encouraging more migration of the dirty industries to the LDCs (Less Developed Countries)? I can think of three reasons:
ReplyDelete(1) The measurement of the costs of health-impairing pollution depends on the foregone earnings from increased morbidity and mortality. From this point of view a given amount of health-impairing pollution should be done in the country with the lowest wages. I think the economic logic behind dumping a load of toxic waste in the lowest-wage country is impeccable and we should face up to that.
(2) The costs of pollution are likely to be non-linear as the initial increments of pollution probably have very low cost. I've always thought that under-populated countries in Africa are vastly under-polluted; their air quality is probably vastly inefficiently low [sic] compared to Los Angeles or Mexico City. Only the lamentable facts that so much pollution is generated by non-tradable industries (transport, electrical generation) and that the unit transport costs of solid waste are so high prevent world-welfare-enhancing trade in air pollution and waste.
(3) The demand for a clean environment for aesthetic and health reasons is likely to have very high income-elasticity. The concern over an agent that causes a one-in-a-million change in the odds of prostate cancer is obviously going to be much higher in a country where people survive to get prostate cancer than in a country where under-5 mortality is 200 per thousand. Also, much of the concern over industrial atmospheric discharge is about visibility-impairing particulates. These discharges may have very little direct health impact. Clearly trade in goods that embody aesthetic pollution concerns could be welfare-enhancing. While production is mobile the consumption of pretty air is a non-tradable.
The problem with the arguments against all of these proposals for more pollution in LDCs (intrinsic rights to certain goods, moral reasons, social concerns, lack of adequate markets, etc) could be turned around and used more or less effectively against every Bank proposal for liberalisation.” এটা সামার্সের “let them eat pollution” memo বলে বেশ কুখ্যাতি পেয়েছিল (এসব বেশ সহজেই ভূতকাল হয়ে যায়)।
আর অনিতা সামার্স-এর ভাই হলেন কেনেথ অ্যারো, যিনি আরেক খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক। ইনি কল্যাণ অর্থনীতি আর নয়া-ধ্রুপদী অর্থনীতির অন্যান্য ধারায় বেশ প্রভাবশালী। স্যামুয়েলসন আর অ্যারো দুজনেই নোবেল পেয়েছেন। আমার মত, এঁরা দুজনেই অর্থনীতির আজকের চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন।